ময়মনসিংহঃ তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁর শারীরিক নানা জটিলতার মধ্যে এই মুহূর্তে লিভারের সমস্যাই সবচেয়ে প্রকট বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। আর খালেদা জিয়ার এই শারীরিক অবনতির দুঃসময়ে বিদেশে তার চিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন ও সর্বস্তরে দোয়ার আয়োজন করেছে দলটি।
দলটির চেয়ারপার্সনের এই দুঃসময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন আন্দোলন ও রোগমুক্তির প্রার্থনায় ব্যস্ত ঠিক সেই সময়ে উল্লাসে মেতেছে ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক শিল্প বিষয়ক সম্পাদক, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম- সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য মুর্শেদ আলম।
ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুর্শেদ আলম ২০১৪ সালের ভালুকা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
গত ২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘উত্তরায় ভালুকা সমিতি’র এক প্রোগ্রামে দেখা যায় ময়মনসিংহ ১১ (ভালুকা) আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনুর সাথে একই মঞ্চে মুর্শেদ আলম বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমার দল বিএনপির মানুষ জানে না ভালুকায় আওয়ামীলীগ না বিএনপি ক্ষমতায়। ভালুকার মাননীয় সংসদ সদস্য ভালুকার প্রাণ প্রিয় সর্বস্তরের নেতা ভালুকায় এনে দিয়েছে শান্তি। এখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করছে। আওয়ামীলীগ বিএনপির কোন ভেদাভেদ নাই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগের বর্তমান অনেক মন্ত্রীসভার সদস্যদের সাথে আমার সখ্যতা রয়েছে। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি আওয়ামীলীগের উন্নয়নের ফিরিস্তি গান।
দলটির চেয়ারপার্সনের মুমূর্ষু অবস্থায় শুধু আওয়ালীগীর উন্নয়নের গল্প বলেই তিনি ক্ষ্রান্ত হননি দলটির কর্মীরা যখন নেত্রীর জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া প্রার্থনা করছেন ঠিক সেই সময়েই তিনি ‘উত্তরায় ভালুকা সমিতি’র প্রোগ্রামে নিত্যনতুন গানে স্টেজ মাতিয়ে রেখেছেন। এটা নিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভালুকা উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এ জাতীয় বক্তব্য ও কর্মকান্ড দলীয় শিষ্ঠাচার বহির্ভূত। প্রিয় নেত্রী যেখানে অসুস্থ সেখানে এমন কাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। তার মত এক নেতা এমন করবেন ভাবতেই পারি না। দলের কর্মসূচী না পালন করে আওয়ামীলীগের গুণগান শুরু করেছেন। ভালুকায় বিএনপির নেতা কর্মীরা যে কত টা কোনঠাসা হয়ে আছে তা উনি বুঝবেন কি করে তিনি তো আওয়ামীলীগের দালালী শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান লিটন এর ফোন নম্বরে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুর্শেদ আলম বলেন, এটা কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না। একটি সমিতির প্রোগ্রাম। দলীয় চেয়ারপার্সনের রোগ মুক্তির জন্য দেশব্যাপী দোয়ার অনুষ্ঠান এবং বিদেশে চিকিৎসার আন্দোলন চলছে তখন মঞ্চে উঠে নাচ গান করা কি দলীয় ভাবমুর্তী ক্ষুন্ন নয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কি নাচ গান করতে পারব না নেত্রী অসুস্থ সব সময়ই কি দোয়া করতে হবে?
ভালুকার এমপি এবং আওয়ামীলীগের উন্নয়নের গুণগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যা এটা ঠিক ভালুকায় কোন আওয়ামীলীগ বিএনপি নেই সবাই আমরা শান্তিতে আছি এখানে কোন রাজনৈতিক রেষারেষি নেই আপনি গিয়ে ঘুরে আসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের নেত্রীর এই দুঃসময়ে যে সব নেতারা উল্লাস করে বেড়ান তাদেরকেই অবশ্যই চিহ্নিত করা হবে। আওয়ামীলীগের এই জুলুমের সময় কোথাও বিএনপির নেতা কর্মীরা ভালো নেই।
উল্লেখ্য, মুর্শেদ আলমের বিরুদ্ধে বনের জমি দখলের একাধিক মামলা, বিভিন্ন মিল কারখানার টাকা আত্মসাৎ, আওয়ামীলীগনেতা-প্রশাসন ম্যানেজ করে জমি কিনে দেওয়া ও খাস জমির দখল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুয়া কাগজ বানিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ সহ এধাকি অভিযোগ রয়েছে।