মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ভাড়া

ঢাকায় মেট্রোট্রেনে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে যাত্রীপ্রতি ভাড়া গুনতে হতে পারে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার যেতে ভাড়া সর্বোচ্চ দিতে হতে পারে আট টাকা। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হতে পারে বড়জোড় ১২ টাকা। আর দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল যেতে যাত্রীপ্রতি ভাড়া দিতে হবে বড়জোড় ৪৮ টাকা। এই ভাড়া আরো কমতে পারে। তবে ভাড়া বাড়বে না বলে সাত সদস্যের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত ভাড়া

দিয়াবাড়ি-মতিঝিল> প্রায় ৪৮ টাকা

দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও> ২৮ টাকা

আগারগাঁও-কারওয়ান বাজার> ৮ টাকা

কারওয়ান বাজার-মতিঝিল> ১২ টাকা

মেট্রোট্রেনে ভাড়া নির্ধারণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বরে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির প্রধান ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। এই কমিটি গত ১০ জানুয়ারি সভায় ভাড়ার হারের প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

মেট্রোরেল আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৮ (২) অনুযায়ী এই ভাড়ার হার প্রস্তাব করা হয়। সর্বশেষ এ প্রস্তাবের আলোকে মেট্রো রেলপথ নির্মাণ তদারকি ও পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। এই প্রস্তাব নিয়েও বৈঠক হয়েছে। কমিটি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এখন ভাড়ার হার চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ফলে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া এগোয়নি এতদিন। এখন করোনার সংক্রমণ কমে আসায় যত দ্রুত সম্ভব তা চূড়ান্ত করা হবে।

প্রথম প্রস্তাবিত ভাড়ার হার ধরা হয়েছিল কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা। ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত ভাড়ার হার প্রথম প্রস্তাবিত হারের চেয়ে বেশি হবে না। ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, মেট্রো রেলপথে নতুন আনা ট্রেনগুলোর পরীক্ষণ চলাচল শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। সেই সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের ভাড়াও চূড়ান্ত করা হবে।

ঢাকা মহানগরীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রো রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলপথ ভূমি থেকে ১৩ মিটার উঁচুতে স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই উড়াল রেলপথের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ চালু করা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে বাকি রেলপথ চালু করা হবে। এই ভ্রমণপথের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।

জানা গেছে, ভাড়ার হার প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল নির্মাণে সরকারি খাত ও বৈদেশিক ঋণের মাসিক ও দৈনিক খরচ, মেট্রোরেল পরিচালন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতকে পর্যালোচনা করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তার সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের হিসাবও নিরীক্ষা করে কমিটি।

জানা গেছে, মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালন ব্যয় যোগ করলে মাসে খরচ হয় গড়ে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক হিসাবে এ অর্থ প্রায় দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মেট্রো রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। মেট্রো রেলপথ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দৈনিক প্রায় ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১১ হাজার টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে বেতন-ভাতায় দৈনিক খরচ সাত লাখ এক হাজার টাকা, বৈদ্যুতিক বিল ৬৮ হাজার টাকা ও তিন লাখ ৩৬ হাজার টাকা দৈনিক ব্যয় হতে পারে।

এছাড়া প্রকল্প খরচের ব্যয় দৈনিক সরকারি উৎসে ৪৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা ও বৈদেশিক ঋণের উৎসে এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা হিসেবে ধরে এবং আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সাত সদস্যের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি গত জানুয়ারিতে ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছিল।

উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে শুরু হয়ে পল্লবী, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে এই উড়াল রেলপথের। এটি কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।

মেট্রোরেল আইন-২০১৫ অনুসারে, মেট্রোরেলের প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকবে।

Check Also

128

এক দিনে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৬ জন। একই সময়ে ডেঙ্গু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *