রিকশার প্যাডেলে জীবনের চাকা ঘুরিয়ে অনেকেই করেছেন ভাগ্যের পরিববর্তন তবে এগুলো সাফল্যের গৌরবের গল্প। তবে এক সময়ে বাসের সহযোগী (হেল্পার) থেকে মাদক ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার গল্পও কম নয় তবে সেগুলো গৌরবের নয় সুশাসন ও প্রশাসনিক দুর্বলতার। এমনই এক ঘটনা মানিকগঞ্জের। বাসের হেল্পার থেকে মাদক ব্যবসায়ী হয়ে শত কোটি টাকা কামিয়ে এখন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীনাম মোঃ লাভলু মিয়া। টাকার ভাঁড়ে এখন মোঃ লাভলু মিয়া আগে ছিলেন চোরা লাভলু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় টাঙ্গাইল মানিকগঞ্জ রুটে চলাচল করা বাসের (লোকাল) সহযোগি (হেল্পার) হয়ে দিন মুজুর ভিত্তিক কাজ করতেন লাভলু। সেই সুবাধে মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল এলাকার বেশ কিছু বড় বড় মাদক পাচারকারীর সাথে পরিচয় হয় লাভলুর। মাদক সাম্রাজ্যে যাত্রা শুরু সে থেকেই। হু হু করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান। মোঃ লাভলু মিয়া থেকে পরিচিতি পান চোরা লাভলু। বাসের হেল্পার থেকে হয়ে যান টাঙ্গাইল মানিকগঞ্জ রুটে চলাচল করা সোনার তরী পরিবহনের মালিক। আলাদীনের প্রদিবের মত তার হাতে চলে আসে মাদক। ভাগ্য পরিবর্তনে বেশিদিন লাগেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবহনের মালিক হলেও সে সময় মাদক বাণিজ্য ছাড়তে পারেননি তিনি। চাঁপাইনবাগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল এনে তিনি মানিকগঞ্জে পাচারকালে রাজধানীর আমীনবাজারে পুলিশের হাতে ধরা পরেন। তবে সে যাত্রায় পার পেয়ে যান রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।
মাদক বাণিজ্য থেকে অঢেল সম্পদের মালিক চোরা লাভলু তার নিজের অবস্থান শক্ত করতে রাজনৈতিক নেতাদের হাত করা শুরু করেন। হয়ে যান মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেলের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড। আমিনবাজারে ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাত থেকে প্রভাব খাটিয়ে তাকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন এই আপেল। মানিকগঞ্জের বহুল আলোচিত এই রাজনৈতিক নেতা আপেলের প্রতিটি কার্যক্রমেই লাভলু মিয়াকে পাওয়া যায়।
লাভলু মিয়ার এখন বাসের মালিকানা না থাকলেও এক সময়ে মাদক বাণিজ্যে গড়া সাম্রাজ্যের কমতি নেই। নামে বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি। মানিকগঞ্জ শহরে আবাসিক হোটেল থেকে শুরু একাধিক দোকান ও জমির মালিক তিনি। মানিকগঞ্জ সদরের ফাতেমা নবাব মাদ্রাসা মসজিদের সভাপতিও তিনি।
তবে মানিকগঞ্জের সচেতন মহলের দাবি, এ জাতীয় মানুষের মুখোশ জনসমুখ্যে আশা উচিত। খতিয়ে দেখা উচিত তার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের উৎস।
তবে এ বিষয়ে লাভলু মিয়া ওরফে চোরা লাভলুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কে কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে আমাদের এখানে কোন অভিযোগ নাই। তবে শুধু অভিযোগ থাকলেই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তা নয় যদি তিনি এমনটা করে থাকেন অবশ্যই আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। মাদকের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারি পরিচালক খন্দকার ওসমান বলেন, অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে আমরা বরাবরি ব্যবস্থা নিচ্ছি যদি আমরা খোঁজ নিয়ে এমনটা পাই তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।