আগামী ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে সকল প্রকার নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। এ ঘোষণার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা পূনরায় শুরু করে দিয়েছেন। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা ইউপি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা না হলেও দলের মনোয়ন পত্র ইতিমধ্যে বিক্রি করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ। এরই মধ্যে দলীয় মনোয়ন পত্র ক্রয় করেছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকশত চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীরা। শুরু করেছে দলীয় হাইকমান্ড বরাবর দৌড়ঝাঁপ, লবিং ও যোগাযোগ। তবে দলীয় মনোয়নপত্র যারা কিনেছেন এদের মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিরাও যেন থেমে নেই। তবে আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড বলছে কোন ধরণের বিতর্কিত ব্যক্তিদের দল থেকে মনোয়ন দেয়া হবে না।
উপজেলার কলিমহর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এরমধ্যে দলীয় মনোয়নপত্র কিনেছেন বেশ কয়েকজন। তবে দলের মনোয়নপত্রে মনোয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে যত নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছেন তিনি যুবলীগ নেতা (ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক) জমির হোসেন। যিনি হত্যা মামলার আসামী। খেটেছেন জেলও। মামলা চলমান। বর্তমানে জামিনে বাইরে থেকে অর্থ ও দলীয় নেতাদের সাথে লবিং করে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছেন। এখন স্বপ্ন দেখছেন আগামী পাঁচ বছর ইউনিয়নটির শাসক হতে। দিন রাত গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে। এলাকার নেতাকর্মীদের ভাষ্য তিনি জেলার হাইকমান্ড থেকে সিগন্যাল পেয়েই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য গণসংযোগ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ ২০১৯ সালে রাত ১০টার দিকে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের লাহিড়ী রঘুনাথপুর গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আব্দুল ওহাব শেখ নামে এক নিরীহ কৃষক নিহত হয়। সে সময় ওই কৃষকের ছেলে সজিব শেখ এবং নিহতের মামাতো ভাই ও স্থানীয় মৃত আফসার উদ্দিনের ছেলে কে এম সিরাজুল ইসলাম দুলাল আহত হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে নিহতের স্ত্রী হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে ওই চার জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনকে আসামি করে পাংশা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আর এই মামলার অন্যতম আসামী বর্তমান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লাহিড়ী রঘুনাথপুর গ্রামের মজিবর রহমানের (অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক) ছেলে জমির হোসেন ওরফে জিকু। আর এই মামলা দায়ের একদিন পরেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি কামাল হোসেন ভুইয়া নেতৃত্বে অভিযানে ৪ জনকে আটক করে ডিবি। আর আটকের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জমির হোসেন কৃষক হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারও করেন। পরে বর্তীতে তাকে আদলের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। ক্ষমতা ও অর্থের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বর্তমানে সেই মামলার জামিনে থেকে এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

শুধু হত্যা মামলার আসামীই নন এলাকায় মাদক বিস্তারেও রয়েছে তার আদিপত্য। আওয়ামীলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান জলিল মন্ডলের সহযোগিতায় এলাকায় মাদক ও আধিপত্য বিস্তারে তার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। নিজে মাদকাশক্ত ও এর ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও চেয়ারম্যান হলে প্রথমে মাদক মুক্ত ইউনিয়ন গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন গণসংযোগে। শুধু হত্যা কিংবা মাদকের সংশ্লিষ্টতাই নয় তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্রিয়া কলাপেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা স্কুল শিক্ষক মজিবর রহমান মাস্টারের ছেলে যুবলীগ নেতা মোঃ জমির হোসেন বিএনপি জোট সরকারের আমলে তৎকালীন একই ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আক্কাস আলীর ছোট ভাই আব্দুস সালামের সহযোগী হয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে তিনি আওয়ামীলীগের সাথে মিশে যান।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) কার্যালয় থেকে জানানো হয়, হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় আমরা জমির হোসেনকে হত্যা সংঘটিত হবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে আটক করি। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে আদালতে প্রেরণ করি আমরা সে মামলা আদালতে চলমান। তবে কে জামিনে আছে কে জামিনে নাই সেটা আদালতের এখতিয়ার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জমির হোসেন বলেন, আমি হত্যার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয়, ঘটনার সময় আমি কয়েকজনের সাথে চায়ের দোকানে বসা ছিলাম। তবে ডিবির কাছে স্বীকারোক্তি বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে সাবেক বিএনপির চেয়ারম্যানের ভাইয়ের সাথে চলাচলের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমাকে চেয়ারম্যানের লোকজন মারধর এবং আমার বাড়িঘরও ভাঙ্গচুর করেছিল সে সময়। আর মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল সুত্র বলে, বিতর্কিত কোন ব্যক্তি দলের নমিনেশন নিলেও দল থেকে তাকে কোন ভাবেই মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে না।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আওয়ামীলীগের সভাপতি খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুরো বক্তব্য নিতে তার মূঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।