দাখিল পাস আনোয়ার সব রোগের ডাক্তার

রোগ শোকে কাতর ও অসুস্থ মানুষের অত্যন্ত আস্থার পাত্র হলেন ডাক্তার। ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে কিছুটা হলেও সুস্থতা বোধ করেন রোগী। তবে সেই ডাক্তার যদি ডাক্তারি পড়াশোনা না করেই রোগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন তাহলে রোগীর কি অবস্থা হবে ভাবা যায়? সাভারের আশুলিয়ায় দাখিল পাস করা এমন ডাক্তারের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা পোস্ট। যিনি রাজশাহী ঔষধালয় নামের প্রতারণার দোকান খুলে বসেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের পুকুরপাড় (চারতলা) এলাকায় রাজশাহী ঔষধালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। যেখানে বিশেষ কিছু স্ত্রী রোগের চিকিৎসা করা হয়। এখানে সমাধান করা হয় জ্বিন-ভূতসহ নানা সমস্যারও। তবে নিজেকে ডাক্তার মানতে নারাজ এই আনোয়ার হোসেন। তার দাবি শুধু আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই এলাকায় দুটি আয়ুর্বেদিক ঔষধালয় রয়েছে। একটি রাজশাহী ঔষধালয় আরেকটি দিনাজপুর ঔষধালয়। দুটিতেই জ্বীন-ভূত সমস্যাসহ স্বামী স্ত্রীর অমিল সমস্যার সমাধান করা হয়। এদের মধ্যে একজন এসএসসি পাস করে হয়েছেন ডাক্তার। অপরজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার হলেও দিচ্ছেন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা।

স্থানীয় পোশাক শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, আমি গ্যাসট্রিক সমস্যায় ভুগছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। রাজশাহী ঔষধালয়ে গিয়ে গ্যাসট্রিকের চিকিৎসা করে ভালো ফল পেয়েছি। কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। পরে সেখানে গেলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেন ডাক্তার। এসব ওষুধ খেয়ে কোনো লাভ হয়নি। শুধু শুধু টাকা নষ্ট হয়েছে। পরে শুনি সেখানে নাকি কোনো ডাক্তারই নেই।

প্রতারণার শিকার অপর রোগী বিজলি বলেন, আমি এই এলাকায় প্রায় ৬ বছর ধরে চাকরি করছি। আর দীর্ঘদিন ধরে এখানে দুটি আয়ুর্বেদিক ঔষধালয় ব্যবসা করে আসছে। তারা দুই জনই জ্বীন-ভূত তাড়ানো, স্বামী স্ত্রীর অমিল, হারানো জিনিস খুঁজে দেওয়াসহ নানা সমস্যা সমাধানের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা প্রতারণার মেশিন নিয়ে এসেছে। সেই মেশিনে পরীক্ষা করে রোগের চিকিৎসা করেন। লোক মুখে শুনি সবই নাকি ভূয়া।

রাজশাহী ঔষধালয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মাহমুদ হাসানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, আমি আমার মায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলাম এখানে। ভালো উপকার হয়েছে। আজ আমার আন্টির সমস্যা হওয়াও তাকেও নিয়ে এসেছি। এখানে কোনো ডাক্তার নেই জানালে তিনি বলেন, ডাক্তার নেই তাহলে কীভাবে চিকিৎসা করেন? তাদের চিকিৎসায় তো রোগী সুস্থও হচ্ছে। তবে ডাক্তার না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমি নিজে আর এখানে আসবো না।

এ ব্যাপারে রাজশাহী ঔষধালয়ের হেকিম পরিচয় দেওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এখানে ডাক্তারি করি না। তবে ওষুধ কখন কি পরিমাণ খেতে হবে এটা লিখে দেই। আর যদি এটাও অপরাধ হয় পরবর্তীতে ওষুধের গায়ে লিখে দেবো।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারী আয়ুর্বেদিক ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেন। তাদের লেখাপড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। নিজে ওষুধ তৈরি করে বিক্রির ব্যাপারে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ রকম কোনো কিছু তার প্রতিষ্ঠানে করা হয় না। এনালাইজার মেশিন সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মেশিন দিয়ে শুধু প্রতারণাই করা হয়। এই মেশিন আমরা ব্যবহার করি না। আমাদের পাশের একজন এনেছিল। পরে আমরাও এনেছি। মেশিনের কার্যক্ষমতা সম্পর্কে জেনে আমরা এর ব্যবহার বন্ধ করেছি।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এ ধরনের তথ্য তাদের কাছে এখনও আসেনি। তবে এমন ঘটনা যদি থাকে আমরা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। সূত্র; ঢাকা পোস্ট

Check Also

800

বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ভারত: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেশীদের কেন্দ্র করে ভারতের পলিসি আছে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির নবনিযুক্ত হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *